উখিয়া নিউজ ডেস্ক
প্রকাশিত: ১৩/০৩/২০২৫ ৮:১৪ পিএম , আপডেট: ১৩/০৩/২০২৫ ৮:১৫ পিএম

কক্সবাজারের উখিয়ার কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্পের বর্ধিত ২০ নম্বর এলাকার চারপাশ অনেকটা পাহাড়বেষ্টিত। যেখানে একটি মাঠে তৈরি করা হয়েছে রোহিঙ্গাদের বসানোর জন্য। মাঠের পুরোটাই ত্রিপল বিছানো হয়েছে। এই মাঠেই লাখো রোহিঙ্গার সঙ্গে ইফতার করবেন জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস ও প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।

মাঠটির পাশেই আরেকটি অংশে তৈরি করা হয়েছে হেলিপ্যাড। যার কাছে একটি সেন্টারে রোহিঙ্গা কমিউনিটি নেতা, ধর্মীয় নেতা, শিক্ষক ও নারীদের সঙ্গে বৈঠক করবেন দুই জন। আর এই পুরো এলাকায় বাড়ানো হয়েছের নিরাপত্তা। তৈরি করা হয়েছে নিরাপত্তা নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র। বৃহস্পতিবার (১৩ মার্চ) দুপুরে দেখা মিলেছে এসব দৃশ্যের।

অন্তবর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস ও জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস আগামীকাল শুক্রবার (১৪ মার্চ) উখিয়ার রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শনে আসছেন, তাই এত প্রস্তুতি।

শুধু বর্ধিত ২০ নম্বর ক্যাম্পটি না। জাতিসংঘের মহাসচিব ১৮ নম্বর ক্যাম্পের লার্নিং সেন্টার, রোহিঙ্গা সাংস্কৃতিক স্মৃতি কেন্দ্র ও আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর সেবা এবং ত্রাণ বিতরণকেন্দ্র পরিদর্শন করবেন। তাই এসব স্থানের যাতায়াতের রাস্তাগুলো করা হয়েছে মেরামত, বসানো হয়েছে নতুন ইট। একই সঙ্গে নতুন করে সেজেছে পরিদর্শনের স্থানগুলো।

আশ্রয়শিবিরে কার্যক্রমগুলোর তত্ত্বাবধান করছেন সেনাবাহিনী। তাদের সঙ্গে রয়েছে পুলিশ, এপিবিএন, জেলা প্রশাসন এবং শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশন।

অন্যদিকে, জাতিসংঘের মহাসচিব ও প্রধান উপদেষ্টার আগমন উপলক্ষে কয়েক স্তরে নিরাপত্তা বলয় থাকবে বলে জানিয়েছে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী।

কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ট্রাফিক) মো. জসিম উদ্দিন চৌধুরী বলেন, ‘শুক্রবার (১৪ মার্চ) জাতিসংঘের মহাসচিব ও প্রধান উপদেষ্টা কক্সবাজার আসছেন। আশ্রয়শিবিরে যে কার্যক্রমগুলো হবে তা তত্ত্বাবধান করছেন সেনাবাহিনী। পুলিশ কক্সবাজার বিমানবন্দর থেকে ক্যাম্প পর্যন্ত নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা বলয়ের মধ্যে রাখছি। কয়েক স্তরের বলয় থাকবে। মূলত এসএসএফ কক্সবাজার চলে এসেছেন, তারা সব বিষয় সমন্বয় করছেন। আমরা সর্বাত্মক সহযোগিতা করছি।

তিনি বলেন, প্রধান উপদেষ্টার কক্সবাজার শহর কেন্দ্রিক কিছু ভেন্যু রয়েছে, এসব ভেন্যুতেও কয়েক স্তরের নিরাপত্তার বলয় থাকছে।

শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বলেন, আশ্রয়শিবিরে প্রধান উপদেষ্টা ও জাতিসংঘের মহাসচিবের সফর হবে ঐতিহাসিক। আর তাদের সঙ্গে ইফতারে লাখো রোহিঙ্গা স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ করবেন।

কমিশনার মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বলেন, উখিয়ার বর্ধিত ২০ নম্বর ক্যাম্পে জাতিসংঘের মহাসচিব ও প্রধান উপদেষ্টা আশ্রয়শিবিরে রোহিঙ্গাদের সঙ্গে ইফতার করবেন। এটি একটি ঐতিহাসিক ঘটনা ঘটতে চলেছে। বাংলাদেশের জন্য এবং রোহিঙ্গাদের জন্যও তো অবশ্যই। এটির মাধ্যমে রোহিঙ্গাদের সঙ্গে যে বিশ্ব সম্প্রদায় পাশে আছে এবং বাংলাদেশ যে তাদের পাশে রয়েছে এটি প্রমাণিত হচ্ছে। এই সফরে আন্তর্জাতিক মহল রোহিঙ্গাদের সঙ্গে আছে এবং তারা স্বদেশে ফিরবে এমন বার্তা দিবে।

এদিকে, জাতিসংঘের মহাসচিব ও প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের আশ্রয়শিবিরে আগমনকে কেন্দ্র করে উচ্ছ্বসিত রোহিঙ্গারা।

উখিয়ার ১৮ নম্বর ক্যাম্পের বাসিন্দা মোহাম্মদ জোহার বলেন, বাংলাদেশের বর্তমান প্রধান ড. ইউনূস সাহেব আমাদের দেখতে আসবে এটা শুনেই খুবই খুশি লাগছে। জাতিসংঘের প্রধান গুতেরেসও আসবেন, সেটাও আমাদের জন্য অত্যন্ত খুশির। এই কারণে আমরা সবকিছু পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করেছি। এবং অপেক্ষা করছি কখন তারা আসবেন। তাদের ক্যাম্পে আসাটা আমাদের জন্য খুশির সংবাদ।

একই ক্যাম্পের বাসিন্দা রোহিঙ্গা যুবক আব্দু হামিদ বলেন, আমি এই প্রথম ড. ইউনূসকে দেখতে পাব। আমার খুব ইচ্ছা আমাদের দুঃখ দুর্দশার কথা, ক্যাম্পে আমাদের সুবিধা- অসুবিধার কথা তাকে জানাব। আমরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি তিনি কখন আসবেন। তাকে আমরা স্বাগত জানাই। তার আগমন আমাদের কতটা খুশি করেছে সেটা আসলে ভাষায় প্রকাশ করতে পারছি না।

সরকারি হিসাব অনুযায়ী, বাংলাদেশে ১৩ লাখ রোহিঙ্গা অবস্থান করছে। যার মধ্যে নিবন্ধিত রোহিঙ্গার সংখ্যা ১০ লাখ ৫ হাজার ৫২০ জন। পরিবার রয়েছে ২ লাখ ৪ হাজার ২৭৪টি। আশ্রিতদের মধ্যে ৫২ শতাংশ শিশু, ৪৪ শতাংশ প্রাপ্ত বয়স্ক এবং ৪ শতাংশ বয়স্ক রয়েছে। যার মধ্যে ৪৯ শতাংশ পুরুষ এবং ৫১ শতাংশ নারী। আর প্রতিবছর ৩০ হাজার রোহিঙ্গা শিশু জন্মগ্রহণ করে।

তথ্যানুযায়ী, ১৯৭৭-৭৮ সালে ২ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করে, যার মধ্যে ১ লাখ ৯০ হাজার মিয়ানমারে ফিরে যায়। এরপর ১৯৯১ সালে ২ লাখ ৫০ হাজার ৮৭৭ জন অনুপ্রবেশ করে, যার মধ্যে ২ লাখ ৩৬ হাজার ৫৯৯ জন মিয়ানমারে ফিরে যায়। ২০১২ থেকে ১৬ সাল পর্যন্ত ৮৭ হাজার রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ করে। তারপর ২০১৭ সালে ৮ লাখ ৫০ হাজার রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ করে। আর ২০২৪ সালে ৬৪ হাজার ৭১৮ জন রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ করে। কিন্তু দীর্ঘ ৮ বছরে একজন রোহিঙ্গাকেও মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো সম্ভব হয়নি।

পাঠকের মতামত

মিয়ানমারে পাচারকালে বিপুল খাদ্যসামগ্রী জব্দ, আটক ১০

কক্সবাজারের টেকনাফে সেন্টমার্টিনের ছেঁড়াদ্বীপ এলাকায় কোস্ট গার্ড অভিযান চালিয়ে বিপুল পরিমাণ খাদ্যসামগ্রীসহ ১০ পাচারকারীকে আটক ...

কক্সবাজারে বিয়ের অনুষ্ঠানে কথা-কাটাকাটি, বিএনপি নেতাকে ছুরিকাঘাতে হত্যা

কক্সবাজারের টেকনাফে বিয়ের অনুষ্ঠানে বাগবিতণ্ডার পরে ছুরিকাঘাতে ইমদাদ হোসেন (৪৭) নামের এক বিএনপির নেতাকে হত্যার ...